নিজস্ব প্রতিবেদক, গোমস্তাপুর : চাঁপাইনবাবগঞ্জের গোমস্তাপুরে মাদরাসার ব্যবস্থাপনা কমিটির সভায় দলবল নিয়ে অহেদুজ্জামান নিপু (৩৮) নামে এক শিক্ষককে বেধড়ক পেটানোর অভিযোগ উঠেছে বোয়ালিয়া ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মো. শামিউল আলম শ্যামল ও তার লোকজনের বিরুদ্ধে। শনিবার (২৫ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যায় উপজেলার কাশিয়াবাড়ি আলিম মাদরাসায় এ ঘটনা ঘটে।
অহেদুজ্জামান নিপু গুরুতর আহত অবস্থায় রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। তিনি কাশিয়াবাড়ি আলিম মাদরাসার সহকারী শিক্ষক ও কাশিয়াবাড়ি গ্রামের মৃত মাহবুল আলমের ছেলে। মাদরাসার নিয়োগ সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে ব্যবস্থাপনা কমিটির সভায় কমিটির শিক্ষক প্রতিনিধি অহেদুজ্জামান নিপুকে মারধর করেন কমিটির সভাপতি ও ইউপি চেয়ারম্যান মো. শামিউল আলম শ্যামল ও তার লোকজন।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, মাদরাসায় নিয়োগ সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে কথা কাটাকাটির জের ধরে চেয়ারম্যান শামিউল আলম শ্যামল কিল-ঘুষি মারতে শুরু করলে তার লোকজনও বেধড়ক পেটান শিক্ষক অহেদুজ্জামান নিপুকে। এ সময় তিনি জ্ঞান হারালে উপস্থিত অন্যান্য শিক্ষকরা তাকে উদ্ধার করে গোমস্তাপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করেন। পরে তাকে চিকিৎসকরা রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার্ড করেন।
আহত শিক্ষকের স্ত্রী ও একই মাদরাসার শিক্ষক সাবিহা খাতুন বলেন, নিয়োগ সংক্রান্ত বিষয় ও আগামী ৬ মার্চ মাদরাসার উন্নতিকল্পে আয়োজিত তাফসির মাহফিল নিয়ে ব্যবস্থাপনা কমিটি বৈঠকে বসে। এ সময় কমিটির শিক্ষক প্রতিনিধি অহেদুজ্জামান নিপু তাফসির মাহফিলে স্থানীয় সংসদ সদস্য মুহা. জিয়াউর রহমানের নাম প্রস্তাব করলে ক্ষিপ্ত হয়ে তাকে মারধর শুরু করেন চেয়ারম্যান শামিউল আলম শ্যামল ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি গোলাম মোহাম্মদ ফিটু।
তিনি আরও বলেন, বিনা কারণে সামান্য কথা নিয়ে আমার স্বামীকে তারা মারধর করেছেন। অবস্থা আশঙ্কাজনক দেখে চিকিৎসকরা তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার্ড করেছেন। রাত সাড়ে ৯টা পর্যন্ত তার জ্ঞান ফেরেনি। এ বিষয়ে আমার স্বামীর জ্ঞান ফিরলে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করব।
গোমস্তাপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরি বিভাগের মেডিকেল অফিসার ডা. শহিদুল ইসলাম জানান, আহত শিক্ষককে হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়েছে।
এদিকে অভিযুক্ত ইউপি চেয়ারম্যান ও কাশিয়াবাড়ি আলিম মাদরাসার সভাপতি মো. শামিউল আলম শ্যামল মারধরের বিষয়টি অস্বীকার করেছেন। মুঠোফোনে তিনি বলেন, তাফসির মাহফিলে প্রধান অতিথির প্রস্তাব দেওয়াকে কেন্দ্র করে উত্তেজিত হয়ে পড়েন ওই শিক্ষক। এমনকি মারমুখী আচরণ করেন। এ ঘটনার স্থানীয় জনতা তাকে মারধর করেছে।
এ বিষয়ে উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি গোলাম মোহাম্মদ ফিটু বলেন, তাকে আমরা প্রথমে মারধর করিনি। সে প্রথমে আমাদের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করেছে। এমনকি সভাপতি ও চেয়ারম্যানকে শ্যামলকেও মারতে উঠেছেন। এমন ব্যবহার করলে তাকে মারবে না তো পূজা করবে? আপনি এলাকায় এসে খোঁজ নেন, আসলে বিষয়টি কী। এরপরেও যদি ওই শিক্ষক মিথ্যাচার করেন, তাহলে আবার তাকে মারব।
গোমস্তাপুর থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাহবুবুর রহমান বলেন, বিষয়টি শুনেছি। তবে এ বিষয়ে কেউ থানায় অভিযোগ করেনি। অভিযোগ পেলে তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
Leave a Reply